বাংলাদেশে বসবাসকারী অনেক মানুষের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, বিশেষ করে যখন তারা বিদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন। ২০২৫ সালের শুরুতে, করোনাভাইরাস মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারের পর বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ভ্রমণের নীতি পরিবর্তিত হয়েছে।
বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য, বর্তমানে কোন কোন দেশ ভিসা চালু রেখেছে, তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন দেশের ভিসা নীতির পরিবর্তন, সহজীকরণ বা নতুন ভিসা প্রক্রিয়া বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য আরো সুযোগ তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ থেকে কোন কোন দেশের ভিসা চালু আছে?
বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রক্রিয়া এখন অনেক সহজ এবং কিছু দেশে ভিসা-অন-অ্যারাইভাল সুবিধাও চালু রয়েছে। বিভিন্ন দেশের ভিসা শর্ত এবং প্রক্রিয়া অনুযায়ী, বাংলাদেশের নাগরিকরা সহজে ভ্রমণ করতে পারবেন। নিচে সেই দেশগুলোর তালিকা দেওয়া হলো, যেখানে বাংলাদেশ থেকে ভিসা চালু রয়েছে:
১. ভারত:
ভারত, বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী দেশ, অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রদান করে আসছে। তবে, করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে ভারতীয় সরকার ভিসা প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন এনেছে। এখন ভারত যাওয়ার জন্য ই-ভিসা সুবিধা চালু করা হয়েছে, যা প্রক্রিয়াকে সহজ করেছে।
২. মালদ্বীপ:
মালদ্বীপে ভ্রমণের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সাধারণত খুব সহজ। মালদ্বীপ সরকার বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা-অন-অ্যারাইভাল সুবিধা প্রদান করছে, যার মানে হচ্ছে, মালদ্বীপ পৌঁছানোর পর সেখানে ভিসা পাওয়া যাবে।
৩. সিঙ্গাপুর:
সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ব্যবসায়িক ও পর্যটক ভিসা সহজ করে দিয়েছে। ই-ভিসার প্রক্রিয়া চালু রয়েছে, যা ভ্রমণকে আরো সুবিধাজনক করেছে।
৪. থাইল্যান্ড:
থাইল্যান্ডও বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা-অন-অ্যারাইভাল সুবিধা চালু করেছে। তাছাড়া, দেশটি বিভিন্ন ধরনের ভিসা, যেমন টুরিস্ট ভিসা এবং ট্রানজিট ভিসা, সহজ শর্তে প্রদান করছে।
৫. মালয়েশিয়া:
মালয়েশিয়ার জন্য ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া এখনো অনেকটা স্বাভাবিক, কিন্তু করোনার পর কিছু পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের নাগরিকরা মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য অনলাইন আবেদন করতে পারেন এবং কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে তাদের ভিসা ফি কমানো হয়েছে।
৬. সংযুক্ত আরব আমিরাত:
সংযুক্ত আরব আমিরাতও বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে, কিছু ক্যাটাগরিতে দ্রুত ভিসা পাওয়া সম্ভব, যা বাংলাদেশিদের জন্য একটি বড় সুবিধা।
৭. সৌদি আরব:
সৌদি আরবের ভিসা প্রক্রিয়া বাংলাদেশীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানকার শ্রম বাজার অনেক বাংলাদেশির জন্য একমাত্র বিকল্প। সৌদি আরব বর্তমানে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য কিছু সহজ ভিসা প্রক্রিয়া চালু করেছে।
৮. যুক্তরাজ্য (UK):
যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বর্তমানে, সাপ্তাহিক ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া চালু রয়েছে।
৯. কানাডা:
কানাডার ভিসা প্রক্রিয়া কিছুটা দীর্ঘ হলেও, বর্তমানে কিছু ক্যাটাগরিতে দ্রুত ভিসা প্রাপ্তির সুযোগ রয়েছে। কানাডার জন্য পর্যটক, শিক্ষার্থী এবং কাজের ভিসা সহজীকরণ হয়েছে।
১০. যুক্তরাষ্ট্র:
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া কঠিন হলেও, কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সহজ সুবিধা রয়েছে। সেসময় মার্কিন দূতাবাসে দ্রুত আবেদন পদ্ধতি চালু রয়েছে।
নিচে টেবিল থেকে আপনি দেখে নিতে পারেন বাংলাদেশ থেকে কোন কোন দেশের ভিসা চালু আছে ।
দেশ | ভিসা প্রক্রিয়া | বিশেষ সুবিধা |
---|---|---|
ভারত | ই-ভিসা সুবিধা চালু | ভারত ভ্রমণে সহজ প্রক্রিয়া |
মালদ্বীপ | ভিসা-অন-অ্যারাইভাল | মালদ্বীপ পৌঁছানোর পর ভিসা পাওয়া যায় |
সিঙ্গাপুর | ই-ভিসা সুবিধা চালু | ব্যবসায়িক ও পর্যটক ভিসার জন্য সহজ আবেদন |
থাইল্যান্ড | ভিসা-অন-অ্যারাইভাল | পর্যটক ও ট্রানজিট ভিসা সহজ শর্তে পাওয়া যায় |
মালয়েশিয়া | অনলাইন আবেদন ব্যবস্থা | কিছু ক্ষেত্রে ভিসা ফি কমানো হয়েছে |
সংযুক্ত আরব আমিরাত | দ্রুত ভিসা পাওয়ার সুযোগ | নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে দ্রুত ভিসা পাওয়া যায় |
সৌদি আরব | সহজ ভিসা প্রক্রিয়া | বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে |
যুক্তরাজ্য (UK) | সাপ্তাহিক ভিত্তিতে আবেদন প্রক্রিয়া | নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ভিসা আবেদন |
কানাডা | দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়া | পর্যটক, শিক্ষার্থী ও কাজের ভিসার জন্য সহজীকৃত প্রক্রিয়া |
যুক্তরাষ্ট্র (USA) | কঠোর ভিসা প্রক্রিয়া | নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে দ্রুত ভিসা প্রাপ্তির সুযোগ |
কোন কোন দেশের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ?
এখন আপনি হয়তো ভাবছেন, কোন কোন দেশের ভিসা পাওয়া সবচেয়ে সহজ? আমরা কিছু দেশ নিয়ে আলোকপাত করতে পারি যাদের ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া তুলনামূলক সহজ।
- মালদ্বীপ: সবচেয়ে সহজ, কারণ এখানে ভিসা-অন-অ্যারাইভাল সুবিধা রয়েছে।
- থাইল্যান্ড: বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত।
- সিঙ্গাপুর: ই-ভিসা ব্যবস্থা চালু, যা সময় বাঁচায়।
- মালয়েশিয়া: সহজ প্রক্রিয়ায় ভিসা পাওয়া যায়।
- ভারত: সিঙ্গল এন্ট্রি বা মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসার জন্য আবেদন করা যায়।
বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়ার গুরুত্ব
ভিসা প্রক্রিয়া সহজ বা কঠিন হলেও, এটি ভ্রমণকারী ব্যক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। ভিসা ছাড়া আন্তর্জাতিক ভ্রমণ অসম্ভব, তাই এটি নিশ্চিত করা খুব জরুরি।
ভিসা চালুর এক ঝলক
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই বাংলাদেশিদের জন্য নির্দিষ্ট ভিসা প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। তবে, বর্তমানে কিছু দেশ নতুন ভিসা শর্ত, সহজ প্রক্রিয়া বা ছাড় দিয়েছে। চলুন, প্রথমে দেখি কোন কোন দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে ভিসা চালু রেখেছে এবং তার সঙ্গে কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য।
সাধারণ ভিসা প্রক্রিয়া
প্রথমেই, এটি বলার প্রয়োজন যে, বিভিন্ন দেশগুলোর ভিসা প্রক্রিয়া আলাদা। কিছু দেশ আগের মতোই কঠোর নিয়ম চালু রেখেছে, যেখানে অন্যরা ভিসা প্রক্রিয়াকে সহজ করে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিবর্তন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নতুন করে অনেক দেশের নীতি বদলে দিয়েছে। তাছাড়া, সারা বিশ্বে ডিপ্লোমেটিক সম্পর্ক উন্নত হওয়ার কারণে অনেক দেশও ভিসা পেতে সহজ সুবিধা দিচ্ছে।
সাধারন প্রশ্ন ও উত্তর বাংলাদেশ থেকে ভিসা চালু
১. বাংলাদেশ থেকে কোন দেশে ভিসা পাওয়া সবচেয়ে সহজ?
মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া দেশের ভিসা প্রক্রিয়া সবচেয়ে সহজ বলে বিবেচিত হয়।
২. আমি কীভাবে সিঙ্গাপুরের ভিসা পাব?
সিঙ্গাপুরে ভিসা পাওয়ার জন্য আপনাকে ই-ভিসার মাধ্যমে আবেদন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় দস্তাবেজাদি জমা দিতে হবে।
৩. সৌদি আরবে কাজের জন্য কীভাবে ভিসা পাব?
সৌদি আরবে কাজের ভিসা পাওয়ার জন্য আপনাকে সৌদি আরব সরকারের অনুমোদিত কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
৪. থাইল্যান্ডে পর্যটন ভিসা কতদিনের জন্য দেওয়া হয়?
থাইল্যান্ডে পর্যটক ভিসা সাধারণত ৩০ দিনের জন্য দেওয়া হয়।
৫. মালদ্বীপে কি বাংলাদেশের নাগরিকরা ভিসা পেতে পারেন?
হ্যাঁ, মালদ্বীপে বাংলাদেশের নাগরিকরা ভিসা-অন-অ্যারাইভাল সুবিধা পাবেন।
শেষ কথা।
বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ এবং দ্রুত করেছে, তবে কিছু দেশে এখনও কঠোর নীতি রয়েছে।
বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য এই ভিসা প্রক্রিয়া যেন তাদের ভ্রমণের পরিকল্পনা সহজ করে দেয়, এটাই বড় কথা।
আপনি যদি বিদেশে ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন, তবে নিজেকে প্রস্তুত রাখুন এবং ভিসা সম্পর্কিত সবকিছু খোঁজ নিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করতে ভুলবেন না।