থাইল্যান্ড ভিসা খরচ ২০২৫ – টুরিস্ট, কাজের ও মেডিকেল ভিসার বিস্তারিত

থাইল্যান্ড—যা ‘স্মাইলের দেশ’ নামে পরিচিত—বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। বালির সৈকত, ব্যাংককের রঙিন জীবনযাপন, পুকেটের সমুদ্রসৈকত, এবং চিয়াং মাইয়ের পাহাড়ি সৌন্দর্য সবই ভ্রমণপ্রেমীদের আকর্ষণ করে। তবে, এই স্বপ্নময় ভ্রমণ শুরু হয় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ দিয়ে: থাইল্যান্ড ভিসা খরচ

এই নিবন্ধে, আমরা থাইল্যান্ডের বিভিন্ন ভিসা প্রকার, তাদের খরচ, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট, আবেদন প্রক্রিয়া, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে আলোচনা করব। বাংলাদেশিদের জন্য এই গাইডটি বিশেষভাবে সহায়ক হবে।

থাইল্যান্ড ভিসা খরচ ২০২৫

২০২৫ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য থাইল্যান্ড ভিসা খরচ কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে ভিসার ধরন, আবেদন পদ্ধতি এবং এজেন্টের উপর ভিত্তি করে।

ভ্রমণের উদ্দেশ্য অনুসারে টুরিস্ট, কাজের, মেডিকেল কিংবা ট্রানজিট ভিসা প্রয়োজন হতে পারে, যার প্রত্যেকটির খরচ ও বৈধতার সময় আলাদা। সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে টুরিস্ট ভিসা, যা সাধারণত ৬০ দিনের জন্য প্রদান করা হয় এবং এর ফি তুলনামূলকভাবে কম।

কাজের (ওয়ার্ক) ভিসা এবং মেডিকেল ভিসার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ডকুমেন্টস যেমন নিয়োগপত্র, চিকিৎসা সংক্রান্ত আমন্ত্রণপত্র প্রভৃতি জমা দিতে হয়। এইসব ভিসার জন্য খরচ টুরিস্ট ভিসার চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

ভিসা ফি ছাড়াও অনেক সময় প্রসেসিং ফি, এজেন্ট ফি বা সার্ভিস চার্জ যুক্ত হতে পারে, যা সামগ্রিক খরচ বাড়ায়। তাই ভিসার আবেদন করার আগে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নীচে ২০২৫ সালের জন্য থাইল্যান্ডের বিভিন্ন ভিসার সম্ভাব্য খরচের একটি টেবিল দেওয়া হলো:

ভিসার ধরনপ্রবেশাধিকারআনুমানিক খরচ (BDT)বৈধতাথাকার সময়কাল
টুরিস্ট ভিসাএকক৫,২০০ – ৬,০০০৩ মাস৬০ দিন
টুরিস্ট ভিসাএকাধিক১৫,০০০ – ১৭,৩০০৬ মাসপ্রতি বার ৬০ দিন
কাজের ভিসাএকক৮,০০০ – ৯,০০০৩ মাস৯০ দিন
মেডিকেল ভিসাএকক৪,৪০০ – ৫,৫০০৩ মাস৬০ দিন
মেডিকেল ভিসাএকাধিক১৫,০০০ – ১৬,০০০৬ মাসপ্রতি বার ৬০ দিন
ট্রানজিট ভিসাএকক৩,০০০ – ৩,৫০০১ মাস৩০ দিন

দ্রষ্টব্য: খরচ ভিন্ন হতে পারে ভিসা অফিস, ভিসা এজেন্ট এবং আবেদন পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে।

থাইল্যান্ডে ভ্রমণ করতে চাইলে, বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসার খরচ ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে ২০২৫ সালের জন্য থাইল্যান্ডের বিভিন্ন ভিসা ক্যাটাগরির খরচ, প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরা হলো।

থাইল্যান্ড ভিসার প্রকার ও খরচ

থাইল্যান্ডে ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসা রয়েছে। নিচে প্রতিটি ভিসার প্রকার ও তাদের খরচের বিস্তারিত দেওয়া হলো:

১. পর্যটক ভিসা (Tourist Visa)

ভিসা প্রকারখরচ (BDT)বৈধতাঅবস্থানের মেয়াদ
একক প্রবেশ৩,৫০০৩ মাসপ্রতি যাত্রায় ৬০ দিন
একাধিক প্রবেশ১৭,০০০৬ মাসপ্রতি যাত্রায় ৬০ দিন

২. ট্রানজিট ভিসা (Transit Visa)

ভিসা প্রকারখরচ (BDT)বৈধতাঅবস্থানের মেয়াদ
একক প্রবেশ৩,০০০৩ মাসসর্বাধিক ৬০ দিন

৩. নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা (Non-Immigrant Visa)

ভিসা প্রকারখরচ (BDT)বৈধতাঅবস্থানের মেয়াদ
একক প্রবেশ৭,০০০৩ মাসসর্বাধিক ৯০ দিন
একাধিক প্রবেশ (১ বছর)১৭,০০০১ বছরসর্বাধিক ৯০ দিন
একাধিক প্রবেশ (৩ বছর)৩৫,০০০৩ বছরসর্বাধিক ৯০ দিন

৪. মেডিকেল ভিসা (Medical Visa)

ভিসা প্রকারখরচ (BDT)বৈধতাঅবস্থানের মেয়াদ
একক প্রবেশ (অনুমতি ছাড়া)৬,০০০৩ মাসসর্বাধিক ৬০ দিন
একক প্রবেশ (অনুমতি সহ)৮,৫০০৩ মাসসর্বাধিক ৬০ দিন

৫. গ্রুপ ভিসা (Group Visa)

ভিসা প্রকারখরচ (BDT)বৈধতাঅবস্থানের মেয়াদ
একক প্রবেশ৩,২০০৩ মাসসর্বাধিক ৩০ দিন
একাধিক প্রবেশ২০,০০০৬ মাসপ্রতি যাত্রায় ৬০ দিন

থাইল্যান্ড টুরিস্ট ভিসা খরচ ২০২৫

থাইল্যান্ডে পর্যটন ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসার খরচ বিভিন্ন ভিসা এজেন্ট ও পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে। নিচে কিছু জনপ্রিয় ভিসা এজেন্টের তথ্য দেওয়া হলো:

ভিসা ক্যাটাগরিখরচ (টাকা)বৈধতাথাকার সময়কাল
একক প্রবেশ (Single Entry)৫,২০০৩ মাস৬০ দিন
একাধিক প্রবেশ (Multiple Entry)১৭,৩০০৬ মাসপ্রতি প্রবেশে ৬০ দিন

উল্লেখ্য, কিছু এজেন্টের মতে, একক প্রবেশ টুরিস্ট ভিসার খরচ ৫,২০০ টাকা হতে পারে, তবে অন্যান্য এজেন্টের মতে এটি ৪,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

থাইল্যান্ড কাজের ভিসা খরচ

কাজের জন্য থাইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য Non-Immigrant ভিসা প্রয়োজন হয়। এর খরচ ও বৈধতা নিচে দেওয়া হলো:

ভিসা ক্যাটাগরিখরচ (টাকা)বৈধতাথাকার সময়কাল
একক প্রবেশ (Single Entry)৮,৩০০৩ মাস৯০ দিন
একাধিক প্রবেশ (Multiple Entry)১৭,৩০০১ বছরপ্রতি প্রবেশে ৯০ দিন

থাইল্যান্ড মেডিকেল ভিসা খরচ

থাইল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসা প্রয়োজন হয়। এর খরচ ও বৈধতা নিচে দেওয়া হলো:

ভিসা ক্যাটাগরিখরচ (টাকা)বৈধতাথাকার সময়কাল
একক প্রবেশ (Single Entry)৫,৩০০৩ মাস৬০ দিন
একাধিক প্রবেশ (Multiple Entry)১৭,৩০০৬ মাসপ্রতি প্রবেশে ৬০ দিন

থাইল্যান্ড ভিসা প্রসেসিং

থাইল্যান্ডের ভিসা প্রসেসিং সাধারণত ৫-১০ কার্যদিবস সময় নেয়। তবে, এটি নির্ভর করে ভিসা ক্যাটাগরি ও এজেন্টের ওপর। ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করে:

  1. অনলাইন আবেদন: থাইল্যান্ডের অফিসিয়াল e-Visa পোর্টালে আবেদন ফর্ম পূরণ করুন।
  2. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস আপলোড: পাসপোর্ট, ছবি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি আপলোড করুন।
  3. পেমেন্ট: অনলাইন পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।
  4. ভিসা অনুমোদন: ভিসা অনুমোদনের পর ই-মেইলে ভিসা গ্রহণ করুন।

বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড ভিসা কত

বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য ভিসার খরচ ভিসা ক্যাটাগরি ও এজেন্টের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত, টুরিস্ট ভিসার খরচ ৫,২০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১৭,৩০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

থাইল্যান্ড মেডিকেল ভিসা ফি ফর বাংলাদেশী

বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য থাইল্যান্ডের মেডিকেল ভিসার খরচ ও বৈধতা নিচে দেওয়া হলো:

ভিসা ক্যাটাগরিখরচ (টাকা)বৈধতাথাকার সময়কাল
একক প্রবেশ (Single Entry)৪,৪০০৩ মাস৬০ দিন
একাধিক প্রবেশ (Multiple Entry)১৬,০০০৬ মাসপ্রতি প্রবেশে ৬০ দিন

বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে

বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে যাওয়ার মোট খরচ বিভিন্ন উপাদানের ওপর নির্ভর করে। নিচে একটি আনুমানিক খরচের তালিকা দেওয়া হলো:

খরচের উপাদানআনুমানিক খরচ (টাকা)
বিমান টিকেট৩০,০০০ – ৫০,০০০
হোটেল (প্রতি রাত)২,০০০ – ৫,০০০
খাবার ও অন্যান্য খরচ১,০০০ – ৩,০০০
ভিসা খরচ৫,২০০ – ১৭,৩০০
মোট আনুমানিক খরচ৩৮,২০০ – ৭৫,৩০০

থাইল্যান্ড ভিসা খরচ: কিছু প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)

প্রশ্ন ১: থাইল্যান্ডের টুরিস্ট ভিসার জন্য কি ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রয়োজন?
উত্তর: হ্যাঁ, সাধারণত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হয় এবং অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম ৭০,০০০ টাকা ব্যালেন্স থাকতে হয়।

প্রশ্ন ২: থাইল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসা আবেদন করতে কি বিশেষ কোনো ডকুমেন্ট প্রয়োজন?
উত্তর: হ্যাঁ, থাইল্যান্ডের হাসপাতালের আমন্ত্রণপত্র, ডাক্তারি রিপোর্ট এবং চিকিৎসার প্রমাণপত্র প্রয়োজন হয়।

প্রশ্ন ৩: থাইল্যান্ডের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া কতদিন সময় নেয়?
উত্তর: ভিসা প্রসেসিং সাধারণত ৫ থেকে ১০ কার্যদিবস সময় নেয়, তবে আবেদনকারীর প্রোফাইল ও ডকুমেন্টসের মান অনুযায়ী সময় পরিবর্তন হতে পারে।

প্রশ্ন ৪: বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে সবচেয়ে সাশ্রয়ী ভ্রমণ সময় কখন?
উত্তর: সাধারনত অফ-পিক সিজন (মে-সেপ্টেম্বর) সময় বিমান ভাড়া ও হোটেল খরচ কম থাকে, তখন সাশ্রয়ীভাবে ভ্রমণ করা যায়।

প্রশ্ন ৫: থাইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য কি ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে আবেদন করাই ভালো?
উত্তর: অনেক ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে আবেদন করলে ভুল কম হয় এবং দ্রুত প্রসেসিং হয়, তবে আপনি চাইলে সরাসরি অনলাইনেও আবেদন করতে পারেন।

শেষ কথা।

২০২৫ সালে থাইল্যান্ড ভিসা খরচ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা বাংলাদেশি ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিসার ধরন, খরচ, এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে আগে থেকে জানা থাকলে ভ্রমণ পরিকল্পনা আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়।

বিশেষ করে টুরিস্ট, কাজের এবং মেডিকেল ভিসার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ডকুমেন্টস ও খরচ থাকে, যা সঠিকভাবে প্রস্তুত না থাকলে ভিসা বাতিলও হতে পারে।

তাই সবসময় বিশ্বস্ত উৎস থেকে তথ্য জেনে এবং প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কাউন্সিলিং নিয়ে আবেদন করাই শ্রেয়। থাইল্যান্ড ভ্রমণ হোক আনন্দদায়ক ও নির্ভরযোগ্য!

আরও জানুনঃ

Author

  • Sumaiya Aktar Tamanna

    আমি, সুমাইয়া আক্তার তামান্নাা , visaproinfo.com-এর একজন লেখক। আমি পাঠকদের বিদেশে যাওয়ার সুবিদার জন্য বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ভালভাবে শেয়ার করি। আমার উদ্দেশ্য হল সঠিক তথ্য এবং বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষের উপকার করা , যাতে তারা আরও সঠিকভাবে নিজেদের জীবন নিয়ে আগাতে পারে, ধন্যবাদ।

Leave a Comment